দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে বিএনপির দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের (শোকজ) জবাব দিয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি শোকজের জবাব দিয়েছেন। দলের অপর ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ জবাব দেননি। তিনি শনিবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন।
বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) রাতে তার একান্ত সহকারি আবদুল মতিন খামের ভেতর জবাবের চিঠি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পৌঁছে দেন। তা গ্রহণ করেন কার্যালয়ের স্টাফ আবদুল গাফফার।
শওকত মাহমুদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, তিন লাইনে তিনি তার জবাব দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শের বাইরে, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কাজে তিনি জ্ঞাতসারে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এরপরও তার অজান্তে কোনো কাজে জড়িত থাকলে তার জন্য তিনি দুঃখিত।
এর আগে ১৪ ডিসেম্বর রাতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের স্বাক্ষরে দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কার্মকাণ্ডের অভিযোগ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিনকে ৫ দিন ও শওকত মাহমুদকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।
বিভিন্ন সময়ে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও সেটা পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন হাফিজ উদ্দিন। বিশেষ করে, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি তা করতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান। এছাড়া সম্প্রতি একাধিকবার প্রকাশ্যে দলের হাইকমান্ডের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। একারণে তাকে শোকজ করা হয়েছে। আর বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি শওকত মাহমুদকে শোকজ করা হয়েছে দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ‘সরকার পরিবর্তন আন্দোলন’র সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে।
দলীয় সৃত্রে জানা যায়, বিএনপি, জামায়াত, ঐক্যফ্রন্ট ও বামসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও কিছু পেশাজীবী নেতা ‘সরকার পতন’র দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বলে বেশ কিছুদিন ধরে প্রচার করা হয়। এজন্য ১৪ ডিসেম্বর দিনটিকে বেছে নেয়া হয়। এ কর্মসূচিতে অংশ না নিতে শেষ মুহূর্তে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোর বার্তা দেয়া হয়। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে হাফিজ উদ্দিন ও শওকত মাহমুদ ওই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন। এ কারণে তাদের শোকজ করা হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, হাইকমান্ডকে না জানিয়ে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে একটি মিছিল বের করে মুক্তাঙ্গনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এই মিছিলে ছিলেন শওকত মাহমুদ। এছাড়া মিছিলের আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সমাবেশ করা হয়। এ কারণে তার বিরুদ্ধে শৃংখলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।
হাফিজ উদ্দিনকে পাঠানো নোটিশে বলা হয়েছে, ওয়ান-ইলেভেনের সময়ে দলকে বিভক্ত করে মহাসচিব হওয়া, বিভিন্ন সময়ে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দায়িত্ব দেয়া হলে সেটা করতে অপারগতা প্রকাশ করা বিশেষ করে কৃষক দলের মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হলেও তা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অসম্মান করে বক্তব্য দিয়েছেন।
শওকত মাহমুদ শোকজের জবাব দিলেও শুক্রবার পর্যন্ত মেজর (অব.) হাফিজ কোনো জবাব দেননি। তবে এ বিষয়ে তিনি শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় বনানীর নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। সেখানে তিনি বিস্তারিত জানাবেন বলে জানিয়েছেন হাফিজ। তার ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানান, শোকজের লিখিত জবাব সংবাদ মাধ্যমকে জানানোর পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেবেন হাফিজউদ্দিন। রাজনীতি থেকে তিনি অবসর নেয়ার ঘোষণা দিতে পারেন। তবে বিএনপির একটি অংশ তাকে সংবাদ সম্মেলন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাব ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদকে ২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। এর আগে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। আর মেজর (অব.) হাফিজ বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন।